১। গুরু এক কিন্তু উপগুরু অনেক হতে পারে। যাঁর কাছে কিছু শিক্ষা পাওয়া যায়, তাঁকেই উপগুরু বলা যেতে পারে। ভাগবতে আছে, অবধূত এইরূপ ২৪টি উপগুরু করেছিল।
২। একদিন মাঠের ওপর দিয়ে যেতে যেতে অবধূত দেখতে পেলে সামনে ঢাক ঢোল বাজাতে বাজাতে খুব জাঁকজমক ক'রে একটি বর আসছে, আর এক দিকে এক ব্যাধ একমনে আপনার লক্ষ্যের দিকে চেয়ে আছে, এত জাঁক ক'রে যে বর আসছে, সেদিকে একবারও চেয়ে দেখছে না! অবধূত সেই ব্যাধকে নমস্কার ক'রে বললে, "তুমি আমার গুরু। যখন আমি ভগবানের ধ্যানে বসব তখন যেন তাঁর প্রতি ঐরূপ লক্ষ্য থাকে।"
৩। একজন মাছ ধরছে, অবধূত তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলে, "ভাই, অমুক জায়গা কোন্ পথ দিয়ে যাব?" সে ব্যক্তির ফাতনায় তখন মাছ খাচ্ছে; সে তার কথায় কোন উত্তর না দিয়ে একমনে ফাতনার দিকে তাকিয়ে রইল। মাছ গেঁথে তখন পেছন ফিরে বললে, "আপনি কি বলছেন?" অবধূত প্রণাম ক'রে বললে, "আপনি আমার গুরু, আমি যখন আপনার ইষ্টের ধ্যানে বসব, তখন যেন এরূপ কাজ শেষ না ক'রে অন্যদিকে মন না দিই।"
৪। একটা চিল একটা মাছ মুখে ক'রে আসছে, তাই দেখে শত শত কাক-চিল তার পেছনে লাগল। তাকে ঠুকরে কামড়ে বিরক্ত ক'রে কেড়ে নেবার চেষ্টা করলে। সে যেখানে যায় সব কাক-চিলগুলো চেঁচাতে চেঁচাতে তার পেছনে যেতে আরম্ভ করলে। শেষে সে বিরক্ত হয়ে মাছটা ফেলে দিলে, আর একটা চিল এসে যেমন নিলে, সব কাক-চিলগুলো প্রথম চিলটাকে ছেড়ে তার পেছনে যেতে লাগল। প্রথম চিলটি নিশ্চিন্ত হয়ে এক গাছের ডালে চুপ ক'রে বসে রইল। অবধূত সেই চিলের নিরাপদ অবস্থা দেখে প্রণাম ক'রে বললে, "এ সংসারে উপাধি ফেলে দিতে পারলেই শান্তি, নতুবা মহা বিপদ।"
৫। একটি জলাশয়ে এক বক আস্তে আস্তে একটা মাছের দিকে লক্ষ্য ক'রে ধরতে যাচ্ছে, পেছনে এক ব্যাধ সেই বকটিকে লক্ষ্য করছে, কিন্তু বক সে দিকে ভ্রূক্ষেপ করছে না। অবধূত সেই বককে নমস্কার ক'রে বললে, "আমি যখন ধ্যান করতে বসব, তখন যেন ঐরকম চেয়ে না দেখি।"
৬। অবধূতের আর একটি [গুরু] ছিল মৌমাছি। মৌমাছি অনেক দিন ধরে কষ্ট ক'রে মধু সঞ্চয় করতে লাগল। কোথা থেকে একজন মানুষ এসে চাক ভেঙ্গে মধু খেয়ে গেল। তার অনেক দিন ধরে সঞ্চয়ের ধন সে উপভোগ করতে পারলে না। অবধূত তা দেখে মধুকরকে নমস্কার ক'রে বললে, "ঠাকুর, তুমি আমার গুরু, সঞ্চয় করলে পরিণামে কি হয় আমি তা তোমার নিকট হতে শিখলাম।"
৭। "গুরু মিলে লাখ লাখ, চেলা না মিলে এক।" উপদেষ্টা অনেক পাওয়া যায়, কিন্তু উপদেশমত কার্য করে, এইরূপ লোক অতি অল্প মেলে।
৮। যদি কারও ঠিক ঠিক অনুরাগ আসে ও সে সাধন-ভজনের প্রয়োজন মনে করে তা হলে নিশ্চয়ই তিনি তার সদ্গুরু জুটিয়ে দেন; গুরুর জন্য সাধকের চিন্তা করবার দরকার নেই।
৯। বৈদ্য তিন প্রকার - উত্তম, মধ্যম ও অধম। যে বৈদ্য এসে কেবল নাড়ী টিপে 'ঔষধ খেও' বলে চলে যায়, রোগী ঔষধ খেলে কি না খেলে তার কোন খোঁজ-খবর না নেয়, সে অধম বৈদ্য। আর যে বৈদ্য রোগী ঔষধ খাচ্ছে না দেখে অনেক মিষ্টি কথায় বুঝায় ও 'ঔষধ খেলে ভাল হবে' ইত্যাদি বলে, সে মধ্যম বৈদ্য। আর যে বৈদ্য রোগী কিছুতেই খাচ্ছে না দেখে বুকে হাঁটু দিয়ে জোর ক'রে ঔষধ খাওয়ায়, সে-ই উত্তম বৈদ্য। সেইরূপ যে গুরু বা আচার্য ধর্মশিক্ষা দিয়ে শিষ্যের কোন খোঁজ-খবর না নেন সে গুরু বা আচার্য অধম; আর যিনি শিষ্যদের মঙ্গলের জন্য বারবার বুঝাতে থাকেন যাতে তাঁর উপদেশ সব ধারণা করতে পারে এবং ভালবাসা দেখান, তিনি মধ্যম গুরু। আর শিষ্যেরা ঠিক ঠিক শুনছে না বা পালন করছে না দেখে যে আচার্য খুব জোর-জবরদস্তি পর্যন্ত করেন, তিনি উত্তম আচার্য।
No comments:
Post a Comment