১। মানুষ আপনাকে চিনতে পারলে ভগবানকে চিনতে পারে। 'আমি কে' ভালরূপ বিচার করলে দেখতে পাওয়া যায়, 'আমি' বলে কোন জিনিস নেই। হাত, পা, রক্ত, মাংস ইত্যাদি - এর কোনটা 'আমি'? যেমন প্যাঁজের খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে কেবল খোসাই বেরোয়, সার কিছু থাকে না, সেইরূপ বিচার কল্লে 'আমি' বলে কিছুই পাইনে! শেষে যা থাকে, তাই আত্মা - চৈতন্য। 'আমার' 'আমিত্ব' দূর হলে ভগবান্ দেখা দেন।
২। দুই রকম 'আমি' আছে - একটা পাকা 'আমি' আর একটা কাঁচা। আমার বাড়ি, আমার ঘর, আমার ছেলে - এগুলো কাঁচা 'আমি'; আর পাকা 'আমি' হচ্ছে - আমি তাঁর দাস, আমি তাঁর সন্তান, আর আমি সেই নিত্য-মুক্ত-জ্ঞানস্বরূপ।
৩। এক ব্যক্তি তাঁকে বলেছিলেন, "আমার এক কথায় জ্ঞান হয়, এমত উপদেশ দিন।" তিনি বললেন, "'ব্রহ্ম সত্য জগৎ মিথ্যা' - এইটি ধারণা কর।" ইহা বলিয়া চুপ করিয়া রহিলেন।
৪। শরীর থাকতে আমার 'আমিত্ব' একেবারে যায় না, একটু-না-একটু থাকেই; যেমন নারিকেল গাছের বালতো খসে যায়, কিন্তু দাগ থাকে। কিন্তু এই সামান্য 'আমিত্ব' মুক্ত পুরুষকে আবদ্ধ করতে পারে না।
৫। নেংটা তোতাপুরীকে পরমহংসদেব জিজ্ঞাসা করেছিলেন, "তোমার যে অবস্থা তাতে রোজ ধ্যান করার আবশ্যক কি?" তোতাপুরী উত্তরে বলেছিলেন, "ঘটি যদি রোজ রোজ না মাজা যায়, তা হলে কলঙ্ক পড়ে। নিত্য ধ্যান না করলে চিত্ত অশুদ্ধ হয়।" পরমহংসদেব উত্তরে বল্লেন, "যদি সোনার ঘটি হয়, তা হলে পড়ে না।" অর্থাৎ সচ্চিদানন্দ লাভ করলে আর সাধনের দরকার নেই।
৬। বিচার দুই প্রকার জানবে - অনুলোম ও বিলোম। যেমন খোলেরই মাঝ ও মাঝেরই খোল।
৭। 'আমি'-বোধ থাকলে 'তুমি'-বোধও থাকবে। যেমন যার আলো জ্ঞান আছে, তার অন্ধকার জ্ঞানও আছে; যার পাপ জ্ঞান আছে, তার পুণ্য জ্ঞানও আছে; যার ভাল বোধ আছে, তার মন্দ বোধও আছে।
৮। যেমন পায়ে জুতা পরা থাকলে লোকে স্বচ্ছন্দে কাঁটার ওপর দিয়ে চলে যায়, তেমনি তত্ত্বজ্ঞানরূপ আবরণ পরে মন এই কণ্টকময় সংসারে বিচরণ করতে পারে।
৯। একজন সাধু সর্বদা জ্ঞানোন্মাদ-অবস্থায় থাকতেন, কারও সহিত বাক্যালাপ করতেন না, লোকেরা তাঁকে পাগল বলে জানত। একদিন লোকালয়ে এসে ভিক্ষা করে এনে একটা কুকুরের উপর বসে সেই ভিক্ষান্ন নিজে খেতে লাগলেন ও কুকুরকে খাওয়াতে লাগলেন। তাই দেখে অনেক লোক সেখানে এসে উপস্থিত হল এবং তাদের মধ্যে কেউ কেউ তাঁকে পাগল বলে উপহাস করতে লাগল। এই দেখে সেই সাধু লোকদিগকে বলতে লাগলেন, "তোমরা হাসছ কেন?
বিষ্ণূপরি স্থিতো বিষ্ণুঃ
বিষ্ণুঃ খাদতি বিষ্ণবে।
কথং হসসি রে বিষ্ণো
সর্বং বিষ্ণুময়ং জগৎ।"
১০। যতক্ষণ সেথা সেথা (অর্থাৎ বাহিরে), ততক্ষণ অজ্ঞান; যখন হেথা হেথা (অন্তরের দিকে), তখন জ্ঞান। যার হেথায় আছে (অর্থাৎ অন্তরে ভাব আছে), তার সেথায়ও আছে (অর্থাৎ ভগবৎপদে স্থান আছে)।